ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সদ্য নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেছেন, ‘সেই মহাভারতের যুগেও ভারতে ইন্টারনেট ছিল’। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আগরতলা শহরে একটি কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তার দাবি, ‘মহাভারতে সঞ্জয় যেভাবে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বহুদূরে অবস্থান করেও ধৃতরাষ্ট্রকে যুদ্ধের বর্ণনা দিয়েছেন, তা থেকেই বোঝা যায় সেই যুগেও ইন্টারনেট ছিল, স্যাটেলাইট ছিল। না হলে চোখ দিয়ে তিনি অতদূর দেখতে পেতেন কী করে!’ ভারতীয় জনতা পার্টি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের নেতা বিপ্লবের কথা ধরলে, আশির দশকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব আবিষ্কৃত হয়নি। যদিও ষাটের দশক থেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কম্পিউটারগুলোর সংযুক্তিকরণের জন্য ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক নিয়ে চিন্তাভাবনা বা গবেষণা শুরু হয়েছিল। তার মতে, ‘খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে, যে সময়ে মহাভারত রচিত হয়েছিল, সেই সময়েও ইন্টারনেট ছিল। মাঝখানের সময়কালে অনেক কিছুই বদলে গেছে। বিদেশিরা দাবী করছে, যে ইন্টারনেট বা স্যাটেলাইট তাদের আবিষ্কার।’
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আরো দাবি করেছেন, ‘এটা সেই দেশ, যেখানে লাখো বছর আগে থেকেই বিজ্ঞান আর প্রকৌশল রয়েছে’। শুধু তিনিই এমন ‘নতুন বৈজ্ঞানিক তথ্যে’র জনক নন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে তার সরকারের মন্ত্রী বা নানা রাজ্যের বিজেপি নেতারা গত কয়েক বছরে এমন অনেক অবিশ্বাস্য তথ্য দিয়েছেন, যেগুলো সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিক মহলে হাসির উদ্রেক ঘটিয়েছে। এর আগে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালের অক্টোবরে বলেছিলেন যে নিশ্চয়ই সেই যুগে এমন কোনো প্লাস্টিক সার্জন ছিলেন, যিনি হাতির মাথা গণেশের শরীরে লাগিয়েছিলেন।
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধা মোহন সিং ২০১৫ সালে ‘যোগভিত্তিক কৃষিকাজ’ কী, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলেন যে ওই পদ্ধতিতে বীজের মধ্যে ধনাত্মক শক্তি প্রবেশ করানো হবে। যেন পরমাত্মা শক্তির মাধ্যমে বীজগুলিকে উজ্জীবিত করা যায়। ভারতীয় ঋষিরা যোগবিদ্যা সাধনার ফলে ‘দিব্যদৃষ্টি’ অর্জন করতেন, সেটাই টেলিভিশন আবিষ্কারের গোঁড়ার কথা। একটি বইয়ের মুখবন্ধে লিখেছিলেন মোদী। উত্তরখণ্ড রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্কর কথায়, লাখো বছর আগেই কণাদ ঋষি পারমাণবিক বিস্ফোরণের পরীক্ষা করেছিলেন।রাজস্থানের মন্ত্রী বাসুদেব দেভনানী মন্তব্য করেছিলেন গরুই হচ্ছে একমাত্র প্রাণী, যারা নিশ্বাস নেয়ার সময়েও অক্সিজেন নেয় এবং প্রশ্বাস ছাড়ার সময়েও অক্সিজেনই ছাড়ে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সত্যপাল সিং এ বছর জানুয়ারিতে মন্তব্য করেছিলেন যে ডারউইনের বিবর্তনবাদ বা থিওরি অফ ইভোলিউশন’ একটি ভুল মতবাদ। সেটা স্কুল কলেজে পড়ানোই উচিত নয়। হিন্দুত্ববাদী নেতা-মন্ত্রীদের এধরণের অবৈজ্ঞানিক কথা বলার কারণ বিশ্লেষণে ভারতীয় বিজ্ঞান লেখক পথিক গুহ বলেন, ‘জনগণকে মিথ্যা জ্ঞান বিতরণ করার অধিকারেরই আরেক নাম ক্ষমতা। মানুষ সেইজন্যই ক্ষমতা পেতে চায়’।